ঢাকা , শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo চৌদ্দগ্রামে চাঞ্চল্যকর মিশুক চালক সৈকত হত্যার রহস্য উদঘাটন, ঘাতক রিফাত আটক Logo চৌদ্দগ্রামে ম’ব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিএনপি’র বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত Logo আগামীর বাংলাদেশ ও সমসাময়িক ভাবনা, মোঃ রাশেদ  Logo অষ্টম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের রাজনীতিতে প্রবেশ, রাশেদ Logo চৌদ্দগ্রামে ধর্মপুর নাজিম আলী স্কুল এন্ড কলেজের নবগঠিত গভর্নিং বডি’র প্রথম সভা অনুষ্ঠিত Logo চৌদ্দগ্রামে যৌথবাহিনীর অভিযানে গাঁজা-ইয়াবা সহ চিহিৃত ৪ মাদক কারবারি আটক Logo চৌদ্দগ্রামে মৃত ভাইয়ের লাশ নিয়ে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলো আরও ২ ভাই Logo চৌদ্দগ্রাম সীমান্তবর্তী এলাকায় ভারতীয় নাগরিক আটক  Logo চৌদ্দগ্রামে খাল থেকে অজ্ঞাত যুবকের লাশ উদ্ধার Logo কুমিল্লা মুরাদনগরে এক পরিবারের ৩ জনকে হত্যা

চৌদ্দগ্রামে চাঞ্চল্যকর মিশুক চালক সৈকত হত্যার রহস্য উদঘাটন, ঘাতক রিফাত আটক

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে চাঞ্চল্যকর ব্যাটারী চালিত অটো-রিক্সা (মিশুক) চালক মো: তাফরুল ইসলাম সৈকত (১৯) হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের মূলহোতা ঘাতক মো: রিফাত (২৮) কে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টা ৩০মিনিটে উপজেলার কনকাপৈত ইউনিয়নের তারাশাইল গ্রাম থেকে আটক করা হয়েছে। আসামীর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী স্থানীয়দের সহযোগিতায় নাঙ্গলিয়া খাল থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ধামাটি উদ্ধার করে পুলিশ। আটককৃত রিফাত একই ইউনিয়নের আতাকরা ভূঁইয়া বাড়ীর আবুল কাশেমের ছেলে এবং চৌদ্দগ্রাম পৌর এলাকার পূর্ব চাঁন্দিশকরা ওয়াপদা রোডের আবুল ড্রাইভারের বাড়ীর ভাড়াটিয়া। সে নিজেও একজন মিশুক চালক বলে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেন চৌদ্দগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ।

 

ওসি জানান, গত ০৩ জুলাই বিকালে উপজেলার মুন্সীরহাট ইউনিয়নের বাহেরগড়া এলাকার নাঙ্গলিয়া খালপাড়স্থ লক্ষীপুর ব্রীজের নিচ থেকে অজ্ঞাতনাম এক তরুনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে আশেপাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি ভাইরাল হওয়ার সুবাধে নিহতের পরিচয় সনাক্ত করেন তার বাবা মো: খাইরুল ইসলাম। জানা গেছে, ভিকটিম সৈকত দীর্ঘদিন যাবৎ পৌরসভাধিন ওয়াপদা রোডে ইউনুছ মিয়ার বাড়ীতে পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতো। এখানে সে ব্যাটারী চালিত অটো-রিক্সা (মিশুক) চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো। ভিকটিমের সাথে একই এলাকার পাশ্ববর্তী আবুল ড্রাইভারের ভাড়াটিয়া অটো-চালক রিফাত এর সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিলো। তারা কয়েকজন বন্ধু মিলে মাঝেমধ্যে বিভিন্ন স্থানে গোপনে মাদক সেবন করতো বলে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে আসামী রিফাত। ভিকটিমের বন্ধু রিফাত অটো চালিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাওয়া সহ ব্যক্তিগত ঋণের কিস্তি পরিশোধে বারবার ব্যর্থ হওয়ার বিষয়টি তার অপর বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে। আসামী রিফাত তার ঘনিষ্ঠ দুই বন্ধুর প্ররোচনায় একজন মিশুক চালককে হত্যা করে তার অটো-রিক্সাটি (মিশুক) ছিনতাই এবং বিক্রি করে ঋণের টাকা পরিশোধের পরিকল্পনা সাজায়। এরই ধারাবাহিকতায় পূর্ব পরিচিত ভিকটিম মো: তাফরুল ইসলাম সৈকতকে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে গত ০২ জুলাই রাত অনুমান ১১টায় ভিকটিমের মিশুক ভাড়ায় নিয়ে চৌদ্দগ্রাম বাজার থেকে উপজেলা মুন্সীরহাট ইউনিয়নের বাহেরগড়া এলাকার নাঙ্গলিয়া খাল সংলগ্ন নির্জন স্থানে যায়। সেখানে তারা দীর্ঘক্ষণ অহেতুক গল্প-আড্ডায় সময় অতিবাহিত করে। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আসামীর অপর দুই বন্ধু ঘটনাস্থলে আসলে ভিকটিমকে হত্যা করার কথা ছিলো আসামীর। অপর বন্ধুরা আসতে বিলম্ব হচ্ছিল এবং এদিকে রাতও গভীর হয়ে যাওয়ায় আসামী রিফাত পূর্বপরিকল্পিতভাবে ঘটনাস্থলের পাশে লুকিয়ে রাখা ধারালো ধামা দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে সুযোগ বুঝে ভিকটিমের মাথার পেছন থেকে ঘাড়ে কোপ মারে। এতে ভিকটিম মাটিতে পড়ে গেলে রিফাত তাকে উপর্যপরি আরও ৫/৬টি কোপ মেরে মৃত্যু নিশ্চিত করে ভিকটিমের সাথে থাকা মোবাইল, নগদ টাকা এবং মিশুকের চাবি ছিনিয়ে নেয়। পরে মরদেহটি নাঙ্গলিয়া খালের পানিতে ফেলে রেখে সে মিশুকটি নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ওইদিন বিকালে স্থানীয়রা খালের পাড়ে লাশটি দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দিলে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আইনী প্রক্রিয়া শেষে স্বজনদের নিকট লাশ হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনার রহস্য উদঘাটনে থানার উপ-পরিদর্শক মো: মুরাদ হোসেন কাজ করে। ব্যাপক অনুসন্ধান, বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা করা সহ তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় আসামীর কাছে ভিকটিমের মোবাইল থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয় পুলিশ। এরই জের ধরে প্রযুক্তির সহায়তায় আসামীকে গত বুধবার রাতে উপজেলার তারাশাইল গ্রাম থেকে আটক করা হয়। বুধবার বিকালে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হলে আদালতে সে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যার মূল রহস্য উম্মোচন করে। আসামীর অপর সহযোগিদেরকে আটকের ব্যাপারে পুলিশ বেশ তৎপর রয়েছে। মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনকে পুলিশি সফলতা হিসেবে দেখছেন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ।

ট্যাগস

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

চৌদ্দগ্রামে চাঞ্চল্যকর মিশুক চালক সৈকত হত্যার রহস্য উদঘাটন, ঘাতক রিফাত আটক

চৌদ্দগ্রামে চাঞ্চল্যকর মিশুক চালক সৈকত হত্যার রহস্য উদঘাটন, ঘাতক রিফাত আটক

আপডেট সময় ১৪ ঘন্টা আগে

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে চাঞ্চল্যকর ব্যাটারী চালিত অটো-রিক্সা (মিশুক) চালক মো: তাফরুল ইসলাম সৈকত (১৯) হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের মূলহোতা ঘাতক মো: রিফাত (২৮) কে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টা ৩০মিনিটে উপজেলার কনকাপৈত ইউনিয়নের তারাশাইল গ্রাম থেকে আটক করা হয়েছে। আসামীর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী স্থানীয়দের সহযোগিতায় নাঙ্গলিয়া খাল থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ধামাটি উদ্ধার করে পুলিশ। আটককৃত রিফাত একই ইউনিয়নের আতাকরা ভূঁইয়া বাড়ীর আবুল কাশেমের ছেলে এবং চৌদ্দগ্রাম পৌর এলাকার পূর্ব চাঁন্দিশকরা ওয়াপদা রোডের আবুল ড্রাইভারের বাড়ীর ভাড়াটিয়া। সে নিজেও একজন মিশুক চালক বলে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেন চৌদ্দগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ।

 

ওসি জানান, গত ০৩ জুলাই বিকালে উপজেলার মুন্সীরহাট ইউনিয়নের বাহেরগড়া এলাকার নাঙ্গলিয়া খালপাড়স্থ লক্ষীপুর ব্রীজের নিচ থেকে অজ্ঞাতনাম এক তরুনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে আশেপাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি ভাইরাল হওয়ার সুবাধে নিহতের পরিচয় সনাক্ত করেন তার বাবা মো: খাইরুল ইসলাম। জানা গেছে, ভিকটিম সৈকত দীর্ঘদিন যাবৎ পৌরসভাধিন ওয়াপদা রোডে ইউনুছ মিয়ার বাড়ীতে পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতো। এখানে সে ব্যাটারী চালিত অটো-রিক্সা (মিশুক) চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো। ভিকটিমের সাথে একই এলাকার পাশ্ববর্তী আবুল ড্রাইভারের ভাড়াটিয়া অটো-চালক রিফাত এর সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিলো। তারা কয়েকজন বন্ধু মিলে মাঝেমধ্যে বিভিন্ন স্থানে গোপনে মাদক সেবন করতো বলে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে আসামী রিফাত। ভিকটিমের বন্ধু রিফাত অটো চালিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাওয়া সহ ব্যক্তিগত ঋণের কিস্তি পরিশোধে বারবার ব্যর্থ হওয়ার বিষয়টি তার অপর বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে। আসামী রিফাত তার ঘনিষ্ঠ দুই বন্ধুর প্ররোচনায় একজন মিশুক চালককে হত্যা করে তার অটো-রিক্সাটি (মিশুক) ছিনতাই এবং বিক্রি করে ঋণের টাকা পরিশোধের পরিকল্পনা সাজায়। এরই ধারাবাহিকতায় পূর্ব পরিচিত ভিকটিম মো: তাফরুল ইসলাম সৈকতকে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে গত ০২ জুলাই রাত অনুমান ১১টায় ভিকটিমের মিশুক ভাড়ায় নিয়ে চৌদ্দগ্রাম বাজার থেকে উপজেলা মুন্সীরহাট ইউনিয়নের বাহেরগড়া এলাকার নাঙ্গলিয়া খাল সংলগ্ন নির্জন স্থানে যায়। সেখানে তারা দীর্ঘক্ষণ অহেতুক গল্প-আড্ডায় সময় অতিবাহিত করে। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আসামীর অপর দুই বন্ধু ঘটনাস্থলে আসলে ভিকটিমকে হত্যা করার কথা ছিলো আসামীর। অপর বন্ধুরা আসতে বিলম্ব হচ্ছিল এবং এদিকে রাতও গভীর হয়ে যাওয়ায় আসামী রিফাত পূর্বপরিকল্পিতভাবে ঘটনাস্থলের পাশে লুকিয়ে রাখা ধারালো ধামা দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে সুযোগ বুঝে ভিকটিমের মাথার পেছন থেকে ঘাড়ে কোপ মারে। এতে ভিকটিম মাটিতে পড়ে গেলে রিফাত তাকে উপর্যপরি আরও ৫/৬টি কোপ মেরে মৃত্যু নিশ্চিত করে ভিকটিমের সাথে থাকা মোবাইল, নগদ টাকা এবং মিশুকের চাবি ছিনিয়ে নেয়। পরে মরদেহটি নাঙ্গলিয়া খালের পানিতে ফেলে রেখে সে মিশুকটি নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ওইদিন বিকালে স্থানীয়রা খালের পাড়ে লাশটি দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দিলে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আইনী প্রক্রিয়া শেষে স্বজনদের নিকট লাশ হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনার রহস্য উদঘাটনে থানার উপ-পরিদর্শক মো: মুরাদ হোসেন কাজ করে। ব্যাপক অনুসন্ধান, বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা করা সহ তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় আসামীর কাছে ভিকটিমের মোবাইল থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয় পুলিশ। এরই জের ধরে প্রযুক্তির সহায়তায় আসামীকে গত বুধবার রাতে উপজেলার তারাশাইল গ্রাম থেকে আটক করা হয়। বুধবার বিকালে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হলে আদালতে সে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যার মূল রহস্য উম্মোচন করে। আসামীর অপর সহযোগিদেরকে আটকের ব্যাপারে পুলিশ বেশ তৎপর রয়েছে। মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনকে পুলিশি সফলতা হিসেবে দেখছেন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ।