উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে শনিবার (২৪ মে) বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেছে রাজনৈতিক দলগুলো।
নিয়মিতই রাজপথে কর্মসূচি রাখছে বিএনপি। একই সঙ্গে সরকারের প্রতি তাদের সমর্থন অব্যাহত না রাখারও ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছে দলটি। এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়েই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে করলেন তারা।
বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ বৈঠক শেষে জানান, তারা সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট নির্বাচনের রোডম্যাপ চেয়েছেন। একই সঙ্গে সরকারকে নিরপেক্ষ অবস্থানে গিয়ে কাজ করার আহ্বানও জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংস্কার, জুলাই-আগস্ট গণহত্যার বিচারসহ বেশ কিছু ইস্যুতে আলোচনার কথা জানিয়েছে
জামায়াতে ইসলামী। এর পাশাপাশি নির্বাচনের সময় স্পষ্টকরণের ওপরও বৈঠকে তাগিদ দিয়েছে তারা।
বৈঠক শেষে দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, প্রধান উপদেষ্টা যে প্রেক্ষাপটে পদ ছাড়তে চেয়েছেন আমরা তাকে সে অবস্থান থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছি।
এদিকে বৈঠকে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের কথা প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছে এনসিপি। দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জানান, নির্বাচন কমিশনের ওপর তাদের আস্থা নেই। নির্বাচনের পরিবেশ বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। নির্বাচন কমিশন সংস্কার করে যেন সেটা তৈরি করা হয়।
সম্প্রতি নির্বাচনের রোডম্যাপসহ বেশ কিছু ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে বিএনপির। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদে ইশরাক হোসেনের শপথকে কেন্দ্র করে রাস্তা আটকে আন্দোলন শুরু করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এছাড়া পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারের রাখাইনে ত্রাণ পাঠানোর একটি করিডোর কিংবা চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনায় বিদেশিদের দায়িত্ব দেওয়া প্রসঙ্গেও বিএনপির পক্ষ থেকে আপত্তি তোলা হয়। এমন পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগের কথা ভাবছিলেন বলে খবর সামনে আসে।
শনিবার একনেকের বৈঠক শেষে উপদেষ্টা পরিষদের একটি অনির্ধারিত বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে জানানো হয়, প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করছেন না। এসময় অযৌক্তিক দাবি দাওয়া, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও এখতিয়ারবহির্ভূত বক্তব্য এবং কর্মসূচি দিয়ে স্বাভাবিক কাজের পরিবেশ বাধাগ্রস্ত করে তোলা এবং জনমনে সংশয় ও সন্দেহ সৃষ্টি করা নিয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়। পরে রাতে তিন দলের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সবগুলো দল প্রধান উপদেষ্টাকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে।
বিএনপি চায় নির্বাচনের রোডম্যাপ
ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে প্রথমেই কথা বলেন বিএনপি প্রতিনিধি দলের প্রধান খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বিএনপি নেতাদের সাক্ষাতের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু আলোচনার বিষয়বস্তু আমাদের আগে জানানো হয়নি।
তিনি জানান, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপি যা ‘আন্দাজ’ করতে পেরেছিল, তার ওপর ভিত্তি করেই তারা একটি লিখিত বক্তব্য প্রধান উপদেষ্টার কাছে পেশ করেন এবং সেটির ভিত্তিতেই আলোচনা হয়।
ওই লিখিত বক্তব্যের সারাংশ সাংবাদিকদের পড়ে শোনান খন্দকার মোশাররফ হোসেন। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশে গণতন্ত্র উত্তরণের লক্ষ্যে বিএনপি নির্বাচনের রোডম্যাপ দাবি করে আসছে। এছাড়া তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে ‘বিতর্কিত উপদেষ্টাদের’ বাদ দিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠনের জন্য দাবি জানিয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা বিগত সরকারের আমলে রাজনৈতিকভাবে কিংবা পারিবারিকভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাই, আওয়ামী লীগের বিচার সবচেয়ে বেশি দাবি করে বিএনপি। সুতরাং, বিএনপি যদি ক্ষমতায় যায়, তাহলে স্বাধীন বিচার বিভাগের মাধ্যমে বিচারকাজ সম্পন্ন করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সংস্কার কার্যক্রম অবিলম্বে সম্পন্ন করে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে দলটি। তাদের মতে, এই সরকারের মূল দায়িত্ব হলো সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, যে কোনো উছিলায় নির্বাচন যত বিলম্ব করা হবে, আমরা মনে করি, আবার স্বৈরাচার ফিরে আসার ক্ষেত্রে প্রস্তুত হবে। এর দায়দায়িত্ব বর্তমান সরকার ও সংশ্লিষ্টদের ওপর বর্তাবে।
সংশ্লিষ্ট সংস্কার কার্যক্রম অবিলম্বে সম্পন্ন করে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে দলটি। তাদের মতে, এই সরকারের মূল দায়িত্ব হলো সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, যে কোনো উছিলায় নির্বাচন যত বিলম্ব করা হবে, আমরা মনে করি, আবার স্বৈরাচার ফিরে আসার ক্ষেত্রে প্রস্তুত হবে। এর দায়দায়িত্ব বর্তমান সরকার ও সংশ্লিষ্টদের ওপর বর্তাবে।