আজ ৮ই মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবস। প্রতি বছর এই দিনটি নারী অধিকার, সমতা ও ক্ষমতায়নের বার্তা নিয়ে আসে। কিন্তু বাস্তবতা আমাদেরকে কতটা সেই সমতার কাছাকাছি নিয়ে যেতে পেরেছে? যখন একজন আট বছরের শিশু পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয় এবং মৃত্যুর সাথে লড়াই করে, তখন নারী দিবসের তাৎপর্য নতুন করে ভাবিয়ে তোলে।
নারী দিবসের মূল উদ্দেশ্য নারীদের প্রতি সম্মান ও সমতার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ও সরকার এই দিনে নানান প্রতিশ্রুতি দেয়, নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে আলোচনা করে, কিন্তু বাস্তবে নারীরা কতটা নিরাপদ?
বাংলাদেশে নারীদের উন্নয়ন ও অধিকার নিয়ে অনেক অগ্রগতি হয়েছে, কিন্তু নারীর প্রতি সহিংসতা থামেনি। ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, পারিবারিক সহিংসতা, এসিড নিক্ষেপ—এসব অপরাধ আজও আমাদের সমাজে ঘটে চলেছে।
বাংলাদেশে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এসব শাস্তি কতটা কার্যকর হচ্ছে? অনেক সময় অপরাধীরা প্রভাবশালী হওয়ার কারণে শাস্তি থেকে রেহাই পেয়ে যায়, বিচার দীর্ঘায়িত হয়, ভুক্তভোগী ও তার পরিবার হুমকির মুখে পড়ে। ফলে আইনের প্রতি মানুষের আস্থা কমে যায়।
একটি কঠোর শাস্তির বাস্তবায়ন অপরাধ কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে। একজন ধর্ষক যদি জানে তার অপরাধের পরিণতি নিশ্চিত মৃত্যুদণ্ড, তবে সে হয়তো দ্বিতীয়বার ভাববে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, আমরা বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি করেছি, যেখানে অপরাধীরা বারবার পার পেয়ে যায়।
অপরাধ কমাতে করা দরকার-
১. শিক্ষাব্যবস্থায় আইন শিক্ষার সংযোজন – প্রাথমিক স্তর থেকেই শিক্ষার্থীদের দেশের মৌলিক আইন সম্পর্কে সচেতন করা উচিত।
২. দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি – দীর্ঘসূত্রিতার কারণে অনেক ভুক্তভোগী ন্যায়বিচার পায় না। দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
৩. সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি – নারীদের প্রতি সহিংসতা বন্ধে সমাজের সকল স্তরের মানুষকে সচেতন হতে হবে।
৪. আইনের কঠোর প্রয়োগ – কোনো অপরাধী যেন আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যেতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
নারী দিবস শুধু ফেসবুকে স্ট্যাটাস, ফটোসেশন বা একদিনের আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে তার কোনো মূল্য নেই। প্রকৃতপক্ষে, নারী দিবস তখনই সফল হবে যখন প্রতিটি নারী নির্ভয়ে পথ চলতে পারবে, প্রতিটি শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে, এবং অপরাধীরা শাস্তি পাবে।
আজকের দিনটি হোক প্রতিশ্রুতির দিন—শুধু কথায় নয়, কাজে পরিবর্তন আনতে হবে। শুধুমাত্র সম্মান জানানো নয়, নারীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তোলাই হোক আমাদের প্রধান লক্ষ্য।