সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা বন্ধ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী মোঃ নাহিন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী স্বাধীনতা সংগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন দুর্যোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ১৯৮৮ সালে দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৫৪টি জেলা ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হলে, সে সময়ের সরকার প্রধান ও জাতীয় পার্টির নেতা প্রয়াত কাজী জাফর আহমেদ সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় বন্যা মোকাবিলা করেছিলেন।
তিনি আরও বলেন, যারা গণ-অভ্যুত্থানের কৃতিত্ব নেওয়ার চেষ্টা করছেন, তারা ভুল তথ্য দিচ্ছেন। এই আন্দোলন ২০২৪ সালে শুরু হয়নি, বরং ২০১৩ সালেই এর সূচনা করেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির প্রয়াত সভাপতি কাজী জাফর আহমেদ। তিনি গণভবনে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন সমঝোতার জন্য, কিন্তু জনগণের স্বার্থের কথা চিন্তা করে কোনো আপস করেননি এবং আন্দোলন চালিয়ে যান। এর ফলে তাকে নানা দুঃখ-কষ্ট ও মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছিল।
আগামীকাল ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে তিনি বলেন, চৌদ্দগ্রামের কৃতী সন্তান কাজী জাফর আহমেদ স্বাধীনতার অন্যতম সংগঠক ছিলেন। ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৬৪, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তার সহযোদ্ধা আসাদের সঙ্গে তিনি লড়াই করেছেন, যা পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তিনি বলেন, “যারা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানকে এক করে দেখছেন, তারা সম্পূর্ণ ভুল করছেন। এটি কখনোই তুলনীয় নয়।”
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে কাজী মোঃ নাহিন বলেন, “যারা জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে, বাকস্বাধীনতা হরণ করেছে, তাদের বিচার আমরা চাই। নির্বাচনের দাবি নিয়ে যারা কথা বলছে, কিন্তু আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলছে, তারা কী বার্তা দিতে চায়? আমরা চাই অবিলম্বে সুষ্ঠু নির্বাচন, কারণ জনগণ গত ১৫ বছর ভোট দিতে পারেনি। জনগণই ব্যালটের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে প্রত্যাখ্যান করবে।”
তিনি আরও জানান, “আমরা জননেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করবো এবং আগামী সংসদে একসঙ্গে কাজ করবো।”
চৌদ্দগ্রামের উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যারা অতীতে ক্ষমতায় ছিল, তারা চৌদ্দগ্রামের মানুষকে জিম্মি করে রেখেছিল। তাদের আত্মীয়-স্বজন ও দলীয় নেতা-কর্মীদের স্বার্থে সাধারণ মানুষকে অবহেলা করা হয়েছে। আমি আপনাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, যদি সুযোগ পাই এবং আপনারা আমাকে নির্বাচিত করেন, তাহলে আমি চৌদ্দগ্রামকে সন্ত্রাসমুক্ত, মাদকমুক্ত ও দুর্নীতিমুক্ত আধুনিক একটি উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলবো। প্রয়াত কাজী জাফর আহমেদের স্লোগান— ‘চৌদ্দগ্রামের জনতা, গড়ে তোলো একতা’—কে সামনে রেখে আমরা প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ করবো।”
মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) বিকেলে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ডলি রিসোর্টে উপজেলা জাতীয় পার্টির আয়োজিত ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ চৌধুরীর পাশা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম (মনির), সাংগঠনিক সম্পাদক ওবায়দুল হক পাটোয়ারী, যুব সংগঠনের সভাপতি কাজী শহিদসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ। সঞ্চালনা করেন কাজী শহিদ।