ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম এলাকায় মাত্র ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে দুই প্রবাসীর গাড়ি ডাকাতির ঘটনায় পুলিশের সফল অভিযানে ৭ জন আন্তঃজেলা ডাকাত সদস্য গ্রেফতার হয়েছে। এ সময় ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ২টি পিকআপ, লুণ্ঠিত মালামাল, বৈদেশিক মুদ্রা ও বিপুল দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে কুয়েত প্রবাসী নাইমুল ইসলামের গাড়ি এবং ১ মার্চ মালয়েশিয়া প্রবাসী বেলায়েত হোসেনের গাড়ি ডাকাতির শিকার হয়। দু’টি ঘটনায় ডাকাতরা মূল্যবান মালামাল ও বৈদেশিক মুদ্রা লুট করে নেয়। ঘটনার পর পুলিশ মহাসড়কের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখতে পায়, একই পিকআপ ব্যবহার করে ডাকাতির ঘটনা ঘটানো হয়েছে এবং অপরাধীরা একই চক্রের সদস্য।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ চাঁদপুর, চান্দিনা ও নোয়াখালির বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করে। তারা হলো— চাঁদপুরের কচুয়ার আবদুল হান্নান (৩৫), লক্ষীপুরের শরীফ হোসেন (৪৫), কুমিল্লার চান্দিনার মো. আলা উদ্দিন (৩৫), কুমিল্লার নজরুল ইসলাম (৬০) এ সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি পিকআপ, লুণ্ঠিত ১৬ কুয়েতি দিনার, ৮০ মালয়েশিয়ান রিংগিত, একটি কম্বল এবং দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত ডাকাতরা স্বীকার করেছে, তারা ২০-২৫ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল। পুরো চক্রটি তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও চাঁদপুরের বিভিন্ন মহাসড়কে ডাকাতি চালায়। বিশেষ করে, তাদের প্রধান লক্ষ্য প্রবাসীরা।
ডাকাতদের কাজের কৌশল: বিমানবন্দরে তাদের নিজস্ব সোর্স থাকে, যারা প্রবাসীদের তথ্য সংগ্রহ করে। মহাসড়কের মেঘনা টোল প্লাজা থেকে টার্গেটের গাড়ি অনুসরণ করে। নির্জন স্থানে পিকআপ দিয়ে পথরোধ করে অস্ত্রের মুখে ডাকাতি চালায়। গ্রেফতারকৃতরা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে, ২৭ ফেব্রুয়ারি ও ১ মার্চের দুটি ডাকাতিতে তারাই জড়িত ছিল।
অন্যদিকে, মঙ্গলবার রাতে মহাসড়কের চৌদ্দগ্রামের মীরশ্বানী এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে হাইওয়ে পুলিশ আরও ৩ ডাকাতকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন দাউদকান্দির মো. আশরাফ (৩৬), দাউদকান্দির মো. সুমন মিয়া (৩০), সদর দক্ষিণের মো. ইয়াছিন (১৯) এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি পিকআপ, ধারালো কিরিচ, কুড়াল ও রড উদ্ধার করা হয়।
কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ জানান, আন্তঃজেলা ডাকাত দলের মূল হোতাদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
হাইওয়ে থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, “আমরা ডাকাত চক্রের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করছি। মহাসড়ক নিরাপদ রাখতে অভিযান চলবে।”
পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপের ফলে মহাসড়কে ডাকাতদের বিরুদ্ধে বড় সাফল্য এসেছে। তবে ডাকাত চক্রের পুরো নেটওয়ার্ক নিশ্চিহ্ন না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
▪ ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত ২টি পিকআপ জব্দ, বিপুল অস্ত্র উদ্ধার
▪ লুণ্ঠিত মালামাল ও বৈদেশিক মুদ্রা উদ্ধার
▪ মহাসড়কে ডাকাতির ভয়াবহ নেটওয়ার্কের সন্ধান