৮০ লাখ টাকার প্রকল্প তালাবদ্ধ, পথচারীরা ভোগান্তিতে
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় জনগণের সুবিধার জন্য নির্মিত পাবলিক টয়লেট এখন ছাগল-মোরগের খামারে পরিণত হয়েছে! দীর্ঘদিন ধরে তালাবদ্ধ এই টয়লেটগুলো কোনো কাজেই আসছে না, ফলে পথচারী, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী ও যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক পথ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মাঝামাঝি অবস্থিত চৌদ্দগ্রাম পৌরসভা। কিন্তু এতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় জনগণের জন্য নির্মিত পাবলিক টয়লেটগুলো অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকে, কোনোটি পরিণত হয়েছে খামারে, আবার কোনো টয়লেটের চারপাশে চাষ হচ্ছে সবজি!
পৌরসভার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে উপজেলা জনস্বাস্থ্য দপ্তর থেকে প্রায় ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ফাতেমা ট্রেডার্সের মাধ্যমে ২০টি পাবলিক টয়লেট ও ২৯টি ড্রেন নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে চারটি টয়লেট ইজারা নিয়ে পরিচালনা করছেন মোঃ খোরশেদ আলম।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এই টয়লেটগুলো অধিকাংশ সময় তালাবদ্ধ থাকছে, ফলে পথচারী, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ টয়লেটের সুবিধা নিতে পারছেন না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, আটগ্রাম রাস্তার মাথায় মহাসড়কের পাশে নির্মিত একটি টয়লেটে তালা ঝুলছে। স্থানীয়দের দাবি, ২০১৮ সালে নির্মাণের পর কখনো এটি খোলা হয়নি!
অন্যদিকে, চৌদ্দগ্রাম বাজারের লাকসাম রোড (পশু হাসপাতাল সংলগ্ন) ও খাদ্য গুদামের পাশের পাবলিক টয়লেটে ছাগল ও মোরগ পালন করছেন এক দোকানদার। তিনি জানান, ১০ হাজার টাকায় দুই বছরের জন্য টয়লেটটি ইজারা নিয়েছেন, কিন্তু মানুষ ব্যবহার না করায় তালাবদ্ধ রাখেন।
একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী মোঃ ইউনুস মিয়া বলেন,
“টয়লেটের ভেতরে ছাগলের মলমূত্রের তীব্র গন্ধে নিশ্বাস নেওয়া যায় না। সরকার এত টাকা খরচ করল, কিন্তু এখন টয়লেটের পরিবর্তে এগুলো খামারে পরিণত হয়েছে!”
পৌরসভার স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ইমাম হোসাইন সজিব জানান, “আমার জানা মতে, কাঁচাবাজারের টয়লেটটি সচল আছে, বাকি টয়লেটগুলো বন্ধ। তবে এ বিষয়ে ইজারাদার ভালো বলতে পারবেন।”
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পৌর প্রশাসক মোঃ জামাল হোসেন বলেন,
“আমি নতুন দায়িত্ব পেয়েছি, বিষয়টি খতিয়ে দেখে পরে জানাব।”
জনগণের প্রশ্ন: টয়লেট কি জনসাধারণের জন্য, নাকি ব্যক্তিগত খামার?
একদিকে সাধারণ মানুষ টয়লেটের অভাবে চরম ভোগান্তিতে আছেন, অন্যদিকে সরকারি টাকায় নির্মিত এই গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো বছরের পর বছর অব্যবহৃত থেকে নষ্ট হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও দায়িত্বহীনতার কারণে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে পথচারীরা এখন অলিগলিতে মলমূত্র ত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
এখন প্রশ্ন উঠছে, এই পাবলিক টয়লেটগুলো কি সাধারণ মানুষের জন্য, নাকি ব্যক্তিগত খামার হিসেবে ব্যবহারের জন্য? সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।